Wellcome to National Portal
Main Comtent Skiped

Title
এক কর্মবীরের শেষ কয়েক ঘন্টা
Details

ফয়সাল মোল্লা সুজন আমার বর্তমান কর্মস্থলের উপ-সহকারী প্রকৌশলী। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি এলজিইডির এ পদে যোগদান করেছেন। 


উক্ত কর্মস্থলে আমি যোগদানের পরপরই তাঁর স্বভাবজাত কর্মস্পৃহা ও দ্রুততম সময়ে নির্ভুল সার্ভিস ডেলিভারি আমার নজর কাড়ে। অল্প বয়সে তাঁর মা আর আদরের ছোট ভাইটিকে হারিয়ে তাঁর এই সংগ্রামী জীবন তাঁকে যেন এক অদম্য সত্ত্বায় পরিণত করেছিলো। 


সেদিন ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ রবিবার একটি বিশেষ কারণে আমার অফিসে ঢুকতে কিছুটা  দেরী হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে আমার কক্ষে এসে গত দুদিনের কাজের হালনাগাদ তথ্য শেয়ার করছিলো (পরবর্তীতে জানতে পারলাম যে, সেদিন সকাল থেকেই সে একটি প্যাকেজের ফাইনাল বিল দিবে বলে সেই প্যাকেজের অধীন ১১ টি ছোট ছোট স্কীম পরিদর্শন করে এসেছে)। আমি কম্পিউটার থেকে একটি ফরম্যাট বের করে তাঁর হাতে দিয়ে বললাম এটা জরুরী আগামীকালের মধ্যেই পূরণ করে দিতে হবে। “স্যার, আমি একটা সাইটে যাবো সেখান থেকে এসেই করে দিচ্ছি” বলে বের হলো। একটু পরেই অন্য একটা ব্যাপারে কথা বলার জন্য আমি আবার কলিং চেপে আমার অফিস সহায়ককে বললাম "ফয়সাল সাহেবকে ডাকেন"। সে জানালো যে, “ফয়সাল স্যার তো মাত্রই সাইট পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো” 


যদিও সেটি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিলো না (একজন কার্য-সহকারী পাঠিয়ে দিলেই পারতেন) কিন্তু তাঁকে আটকানোর সাধ্য কার! সেখানে যে মৃত্যুদূত তাঁর অন্তিম ক্ষণের মঞ্চ সাজিয়ে বসে আছে! বাইকে করে সাইট পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে মাটি ভর্তি মাহিন্দ্র ট্রাক্টর অনিয়ন্ত্রিতভাবে তাঁর সামনে চলে আসে। হার্ড-ব্রেক করার ফলে বাইক স্কিড করে ট্রাক্টরে লেগে অন্যদিকে ছিটকে পরে আর ফয়সাল চলে যায় ট্রাক্টরের নিচে। ট্রাক্টরের সেই ভারী আর মোটা চাকাটা তাঁর পেট ও কোমড়ের উপর দিয়ে চলে যায়। 


দুপুর ০২ টা ০৫ মিনিটে মোবাইল ফোনটি বেজে ওঠে "স্যার, দ্রুত হাসপাতালে যান ফয়সাল সাহেব এক্সিডেন্ট করেছে অবস্থা খুব গুরুতর, অটো রিক্সা করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে" তৎক্ষনাৎ হাসপালের দিকে  ছুটলাম আর মনে মনে ভাবছি বাইক চালালে এসব ছোটখাটো দুর্ঘটনা হয়ই, হয়তো মারাত্মক কিছু না। হাসপাতালে পৌঁছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা অটো রিকশা আসলো। দেখতে পেলাম গা,মাথা,ঘাড় ছেড়ে দিয়ে অটোর নিচে জড়সড় বসে আছে আমাদের ফয়সাল। ০৩ জনে ধরাধরি করে নিয়ে গেলাম ইমার্জেন্সিতে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আমার এক স্টাফ কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো "স্যার, ফয়সাল সাহেব নাই!" আমি ধমক দিয়ে তাঁকে বললাম "ডাক্তারের চেয়ে বেশি বোঝছেন কেন?" তখনও আশায় বুক বাঁধছি নিশ্চই হার্টবিট আছে। ইসিজি মেশিন এনে পরীক্ষা করে ডাক্তার বললো "সরি! হি ইজ ডেড"। পরবর্তী কয়েক ঘন্টা বর্ণনা করার মত ভাষা আমি আজও শিখতে পারিনি! ছোট্ট দুর্ঘটনার কথা শুনে হাসপাতালে এসে লাশ দেখতে পাওয়া স্বামীহারা স্ত্রী আর সন্তানহারা বাবার এমন গগন বিদারী আহাজারির দৃশ্য যেন আল্লাহ্ আর কাউকে না দেখান। এজন্যই হয়তো তাঁর সকল কাজে এতো তাড়া! সে যে খুব অল্প সময় নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলো!


গোলাম সারোয়ার

উপজেলা প্রকৌশলী

বেলাবো, নরসিংদী।

তারিখঃ ০১-০১-২০২৫

Images
Attachments
Publish Date
01/01/2025
Archieve Date
31/12/2090